নিমপাতা বেটে মুখে দিলে কি হয়?
আমরা কমবেশি সকলেই জানি নিমপাতা সম্পর্কে, নিমপাতা আমাদের নানান রকম ভাবে উপকার করে থাকে। প্রাকৃতিকভাবে নিমপাতা বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা যায়। ত্বকের যত্নে, এবং ঔষধি গুণ হিসেবেও নিম পাতা ব্যবহার অপরিহার্য। চুলের যত্নে ও নিম পাতা ব্যবহার করা হয়।
শুধু তাই নয় নিমপাতা বেটে মুখে দিলে কি হয় তা সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানিনা। তাই নিজে নিম পাতা বেটে ব্যবহার করা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো। সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়লে আশা করি নিম পাতার উপকারিতা সম্পর্কে অনেকটাই জানতে পারবেন। তো চলুন শুরু করা যাক নিম পাতার উপকারিতা সম্পর্কে।
পেজ সূচিপত্রঃ নিমপাতা বেটে মুখে দিলে কি হয়?
নিমপাতা বেটে মুখে দিলে কি হয়?
আমরা সকলেই জানি নিমপাতা প্রাচীনকাল থেকে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা করার জন্য ব্যবহার হয়ে আসছে। নিম গাছের প্রতিটি অংশই বেশ কার্যকরী। যেমন, পাতা, ফল,ছাল,শেকর,বীজ বেশ উপকারি। তবে পাতার উপকারিতা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। পাতা বিভিন্নভাবে বিভিন্ন পর্যায়ে কাজে লাগানো যায়। এটি ভেষজ চিকিৎসায় একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে পরিচিত এবং এর অ্যান্টিসেপটিক, এন্টিফাঙ্গাল, এবং অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়া গুণাবলী মানুষের শরীরে বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে সহায়ক।
নিমপাতা বিভিন্ন বিভিন্ন ভেষজ সমস্যার সমাধানে কার্যকর। নিয়মিত নিম পাতা ব্যবহার করলে ত্বক, চু্ল, পেট, লিভার এবং অন্যান্য অঙ্গের রোগ প্রতিরোধের এটি অসাধারণ ভূমিকা রাখতে পারে। নিম পাতা বেটে তার রস প্রত্যেক দিন সকালে যদি খাওয়া হয় তাহলে শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সমাধান হয় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। নিম পাতা বেটে মুখে এবং চুলে ব্যবহার করা যায়। নিমপাতা ব্যবহার মুখে ব্যবহারের ফলে ব্যাকটেরিয়াল ও ফুসকুড়ি প্রতিরোধ করে।
নিম পাতার উপকারিতা সমূহ
নিম পাতা কিভাবে মুখে দেই এই প্রশ্নটা অনেকেই করে থাকেন। তাই তাদের জন্য ছোট্ট
একটি টিপস, অল্প পরিমাণ নিম পাতার গুড়ো নিয়ে এতে কয়েক ফোটা জলপাই তেল যোগ
করুন। এটি পুরো মুখে ভালোভাবে লাগান এবং কিছুক্ষণ রেখে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে
ফেলুন। সপ্তাহে একদিন বা দুইদিন এই ফেসপ্যাক ব্যবহার করবেন। এতে করে
ব্ল্যাকহেড এবং মুখের গর্ত কমাতে বেশ কার্যকরী। নিমপাতা মুখের ব্ল্যাকহেড,
হোয়াইটহেড এবং বড় লোমকূপের সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
নিম পাতা বেটে সেটা রস বের করে নিয়ে তার সাথে কাঁচা হলুদ বেটে সেটার রস একসাথে
মিক্সার করে তোকে কিছুক্ষণ লাগিয়ে রাখুন। ১৫/২০ মিনিট রাখার পর এটি ঠান্ডা পানি
দিয়ে ধুয়ে ফেলুন এটি আপনার মুখের ব্যাকটেরিয়া দূর করবে এবং ত্বক উজ্জ্বল করতে
সাহায্য করবে। আমরা যদি নিমপাতার রস চুলে লাগাই তাহলে মাথার ত্বক উজ্জ্বল হয় এবং
খুশকি দূর হয়। শুধু তাই নয় মাথায় যদি উকুন থাকে তাহলে অনেকটাই কমে যায়।
মাথায় নিমপাতার রস ব্যবহারের ফলে চুলের গোড়া মজবুত ও ঝলমলে হয়।
আরো পড়ুনঃ খালি পেটে মধু ও কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা
ত্বকের যত্নে নিম পাতার উপকারিতা
ত্বকের সংক্রমণ দূর করে যেভাবে নিমপাতাঃ নিম পাতা ত্বকে সংক্রমণ যেভাবে
ফাংগাল ইনফেকশন, দাদ বা চুলকানি দূর করতে সাহায্য করে। নিম পাতা পানিতে ফুটিয়ে
সেই পানি দিয়ে গোসল করলে সংক্রমণ অনেকটাই কমে যায়। আবার নিমপাতা বেটে সে নিম
পাতার রস সারা শরীরে তেলের মত করে মালিশ করতে হবে এবং গোসলের সময় তা ধুয়ে ফেলতে
হবে এতে করেও সংক্রমণ দূর হবে। আমরা ঔষধি গুণ হিসেবে নিমপাতা তেল ব্যবহার
করে থাকি।
ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় যেভাবে নিমপাতাঃ নিমপাতা ত্বককে গভীর থেকে
পরিষ্কার করে যা তাদের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করে তাকে কোনরকম ফুসকুড়ি বা ঘা
থাকলে সেটা খুব সহজেই ভালো করে নিমপাতা। যাদের শরীরে চুলকানি অনেক বেশি বা
একটুতেই শরীর চুলকায় তারা মাঝে মধ্যেই নিমপাতা বেটে শরীরে লাগিয়ে রাখতে পারেন
বা একটি পাতিলে কিছু নিমপাতা নিয়ে এবং সেটাতে পানি দিয়ে সে পানি ফুটিয়ে হালকা
কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করে নিলে সংক্রমণ থেকে। প্রতিরোধ পেতে পারেন। এটি বেশ
কার্যকরী একটি প্রতিক্রিয়া।
শুধু তাই নয় নিম পাতার ডাল দিয়ে আমরা অনেকেই মেসওয়াক বানিয়ে থাকি। নিম পাতার
ডালের মেসওয়াক করা সুন্নত। এতে করে দাঁত ও সতেজ থাকে মুখে দুর্গন্ধ হয়না। নিম
পাতার ডাল দিয়ে মেসওয়াক করলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। তাই আমরা সকলে নিম পাতা
ডাল দিয়ে মেসওয়াক করবো।
রোগ প্রতিরোধে নিম পাতার ভূমিকা
ব্যবহারঃ সকালে নিমপাতা চিবিয়ে খাওয়া বা নিমপাতার রস পান করুন।
ম্যালেরিয়া প্রতিরোধ করে, নিমপাতা ম্যালেরিয়া বাহিত মশা প্রতিরোধে কার্যকর।
শুধু তাই নয় এটি শরীরের বিভিন্ন দাগ ও ক্ষতস্থানে নিম পাতা বেটে ব্যবহার করলে তা
ব্যাকটেরিয়া ও জীবাণু সংক্রমণ থেকে বাঁচায়। তাই প্রত্যেকদিন সকালে যদি আমরা
কাঁচা হলুদ ও নিমপাতা বেটে সেখান থেকে কিছু রস বের করে নিয়ে থেকে সেই রস খেলে
আমাদের শরীরে কোনরকম চুলকানি ও খোসপাঁচড়া থাকবে না।
ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া বিরুদ্ধে কাজ করে যেভাবে নিমপাতা তা হলঃ নিম পাতা
ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করে এটি ব্যবহার করবেন
যেভাবে, নিম পাতা পানিতে ফুটিয়ে সেই পানি পান করতে হবে। এবং নিম পাতা ফুটিয়ে
সেই পানি দিয়ে যদি গোসল করা হয় তাহলে শরীরের যে কোন ধরনের ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ
প্রতিরোধ করবে।
পেট ও হজমের জন্য উপকারী যেভাবে নিমপাতা তা হলঃ । নিমপাতা পেটের সমস্যার জন্য
একটি প্রাকৃতিক সমাধান। এটি হজম শক্তি বাড়ায় এবং অন্ত্র পরিষ্কার রাখে।
গ্যাস্ট্রিক এবং অম্লন দূর করে নিমপাতা পেটের অম্লতা কমায় এবং গ্যাস্টিকের
সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়। অন্ত্রের পরজীবী দূর করে। নিম পাতা অন্ত্রের ক্ষতিকারক
পরজীবি ধ্বংস করে এবং আন্ত্রকে সুস্থ রাখে।
আরো পড়ুনঃ সকালে খালি পেটে কিসমিস ভেজানো পানি খেলে কি হয়?
চুলের যত্নে নিমপাতার উপকারিতা
চুল পড়া বন্ধ করে যেভাবে নিমপাতা তা হল, নিম পাতা চুলের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে
এবং চুলের গোড়া মজবুত ও শক্ত করে যার কারণে চুল পড়া বন্ধ হয়ে যায়। এটি
ব্যবহারের নিয়ম হলো নিম পাতার তেল চুলের গোড়ায় ভালোভাবে মেসেজ করতে হবে।
সপ্তাহে এক থেকে দুই দিন নিমপাতা বেটে তার রস থেকে নিয়ে সেই রস চুলের গোড়ায়
ভালোভাবে মেসেজ করতে হবে। ২ ঘণ্টা পর এটি পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে এতে করে
চুলের গোড়া শক্ত হবে চুল পড়া বন্ধ হবে।
চুলে উজ্জ্বলতা আনে নিমপাতা এবং প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা আনতে সাহায্য করে নিমপাতা।
আমরা চুল ঝলমলেও উজ্জ্বল করতে অনেক কিছু ব্যবহার করে থাকি। বিভিন্ন উপকরণের সাথে
এ নিমপাতা বেটে যদি আমরা চুলে ব্যবহার করতে পারি তাহলে চুলের উজ্জ্বলতা ও
প্রাকৃতিকভাবে ঝলমলে হয়ে উঠবে।
নিমপাতা ব্যবহারের ফলে শুধু চুলের উপকারিতা নয় এ নিম পাতা বিভিন্নভাবে বিভিন্ন
রকমের উপকার দিয়ে থাকে মানুষের শরীরে। নিম পাতা যেমন চুলের জন্য উপকারী ঠিক
তেমনি ত্বকের জন্য অনেক উপকার করে থাকে। তবে এটি সঠিক নিয়মে ব্যবহার করতে হবে।
নিয়মের বাহিরে ব্যবহার করলে ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিতে পারে। তাই আমরা প্রত্যেকেই
সতর্কতার সহিত নিমপাতা ব্যবহার করব।
প্রাকৃতিক ঔষধে আশ্চর্য গুনে নিমপাতা
নিম গাছের পাতা ভেষজ চিকিৎসায় এটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে পরিচিত এবং এর
অ্যান্টিসেপটিক, অ্যান্টিফাঙ্গাল এবং এন্টি ব্যাকটেরিয়া গুণাবলী মানুষের শরীরে
বিভিন্ন রোগ নিরাময়ের সহায়ক। নিয়ম পাতা ব্যবহার রাখতে সাহায্য করে। আমরা
বিভিন্নভাবে নিম পাতা ব্যবহার করে থাকি খাওয়া থেকে শুরু করে ব্যবহার করা পর্যন্ত
এই নিমপাতার ভূমিকা উল্লেখযোগ্য।
নিমপাতা সম্পর্কে আমরা উপরে অনেক কিছুই জেনেছি, নিম পাতা ব্যবহারের ফলে
প্রত্যেকটি মানুষই প্রায় উপকার পেয়েছে। তাই আমাদের প্রত্যেকটি মানুষের উচিত
আমাদের বাসার আশেপাশে একটি করে হলেও নিম গাছ লাগানো দরকার। যা থেকে আমরা উপকার
পেতে পারি। প্রত্যেকটি গাছেরই কোন না কোন গুন আছে। তবে এই দিক দিয়ে নিম গাছ
অনেক এগিয়ে কারণ নিম গাছের সবকিছুই উপকারী যেমন নিম গাছের কাঠ, পাতা, ছাল, শেকর,
বীজ, এবং ফল এগুলো প্রত্যেকটি কোন না কোন ঔষধি গুণে উপকারী হিসেবে ব্যবহার
করা হয়।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url